এলাকার বাসিন্দারা জানায়, বিদ্যুতের গতিতে ক্ষয়-ক্ষতি হয় বলে বাদামী গাছ ফড়িং পোকার স্থানীয় নাম কারেন্ট পোকা। আক্রান্ত ধান গাছের গোড়ায় খুব ছোট আকৃতির এই পোকা দেখা যায়। এর আক্রমণে দ্রুত খেতের ধানগাছ নষ্ট হয়ে যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর, নাচোল ও ভোলাহাট উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ধান খেতে ক্ষতিকর এই কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন এই অঞ্চলের চাষিরা।
কৃষকরা জানায়, এবার মাঠজুড়ে ধান ভালোই ছিল। আর মাত্র ১০-১২ দিন পরেই ধান কাটা শুরু হবে। ভালো ফলন আশা করছিলেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকা দমনে কীটনাশক প্রয়োগ করে কিছুটা প্রতিকার মিললেও আবারও দেখা দিচ্ছে এই পোকার আক্রমণ। সময়মতো পোকা দমন করতে না পারলে ধানের ফলন মার খাওয়া আশঙ্কা করছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমনুরা হাসেনপুর মাঠের আমন চাষী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘এবার ৬ বিঘা জমিতে তিনি আমন চাষ করেছেন। প্রথম থেকে ধানের অবস্থা ভালো ছিলো। ধান এখন পাকতে শুরু করেছে। আশা ছিলও খুব ভালো ফলন হবে। কিন্তু হঠাৎ জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বিষ স্প্রে করার পর পোকা কম হয়েছিল। কিন্তু আবার পোকা দেখা দিয়েছে। এখন আবার বিষ স্প্রে করছি। এতে যদি পোকা দমন হয়ে যায় তাহলে খরচ বাড়লেও ফলনটা তেমন কমবে না বলে আশা করছি। কিন্তু যদি কাজ না হয় তাহলে তো আশানুরূপ ফলন পাব না, তাই দুশ্চিন্তায় আছি।’
নাচোল উপজেলার জোনাকি পাড়ার কৃষক জাহেরুল ইসলাম বলেন, ‘ধানে পোকা লেগে গেছে। বিষ দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেলাম। বার বার বিষ দিতে হচ্ছে। আর এতে করে খরচও বাড়ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এবার ২০ বিঘা মত জমিতে আমন আবাদ করেছি। ধানের চোহারা খুব ভালো ছিল। কিন্তু কারেন্ট পোকা আমার সর্বনাশ করে দিয়েছে। এর কারণে ফলন কম পাব।’
বেচেন্দা এলাকার চাষি সাইফুদ্দিন বলেন, ‘এবার ধান দেখে তো বুক ভরে যাচ্ছিল। তারপরে ১০-১৫ দিন আগে কারেন্ট পোকার আক্রমণে কারণে বিষ দিয়েছিলাম। একটু কমেছিল কিন্তু আবার পোকা দেখা দিয়েছে। এতে খরচ বাড়ছে। কারো কারো তো ৩ বার বিষ দিতে হলো। শেষ দিকে এস পোকার আক্রমণ, দেখা যাক আল্লাহ কি করেন।’
এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, এতে কৃষকদের উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই, এটি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। খেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ঠেকাতে সঠিক এবং পরিমিত কীটনাশক ব্যবহারে মাঠপর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী বলেন, ‘এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৫১ হাজার ১৬১ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও শেষ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আবাদ হয়েছে ৫৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা ব্রি-ধান ৫১, ৫২, ৩৪, ৭১, ৭৩, ৭৫, স্বর্ণা এই জাতগুলো আবাদ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘ধান কাটতে আর বেশি দিন নেই। তবে শেষ মুহূর্তে আমরা মাঠে ঘুরে দেখেছি অনেক জায়গাতে পোকার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জেলায় প্রায় ৭ দশমিক ৯ হেক্টর জমিতে আমরা পোকার উপদ্রব দেখতে পেয়েছি। আমরা এবং আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত মাঠে যাচ্ছি। কৃষকদেরকে ধানের মাঠে বিলিকেটে ধান গাছের গোড়ায় প্রতিষেধক স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ পোকার আক্রমণ হয়েছে তাতে ফলনের মারাত্মক ক্ষতি হবে বলে আমরা মনে করছি না।’
‘তবে এতে কৃষকের বাড়তি পরিশ্রম হচ্ছে এবং কীটনাশক স্প্রে করাতে তাদের উৎপাদন খরচটা বেড়ে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। আশা করা যায় আমাদের উৎপাদনে তেমন প্রভাব ফেলবে না,’ যোগ করেন তিনি।